বার্তা পরিবেশক:
কবি আল মাহমুদ একজন বহুমাত্রিক শক্তিমান কবি। তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস দুই হাতে লিখলেও সবকিছুকে ছাড়িয়ে তাঁর কবি খ্যাতিটি উৎরে গেছে। বিশেষ করে তাঁর সোনালী কাবিন, নোলক কবিতায় গ্রামের জীবন যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি মায়ের প্রতি ভালাবাসা পাঠককে সহজেই কাছে টানতে পেরেছে। তাঁর বিভিন্ন কবিতা, গল্পে ও উপন্যাসে উঠে এসেছে গ্রামের লোকজ উপাদান।
বিগত ২১ জুলাই ২০১৭ শুক্রবার একাডেমীর ৩৯৩ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় বক্তাগণ এসব কথা বলেন। একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে তরুণ গবেষক নির্বাণ পাল ‘কবি আল মাহমুদের জীবনালেক্ষ’ নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন।
সভায় বক্তাগণ আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অনন্য অপার বিরল সৃষ্টি কালজয়ী কাব্য ‘সোনালী কাবিনে’র ¯্রষ্টা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ প্রতিভাবান ও শক্তিমান কবি এবং এক প্রবাদতুল্য কিংবদন্তির নাম কবি আল মাহমুদ। বিগত কয়েক দশক বাংলা কবিতা যার হাত ধরে আজ চরম উৎকৃষ্ট ও উন্নত শিখরে অবস্থান করছে তিনি কবি আল মাহমুদ। বাংলা কবিতাকে নতুন রূপে, নতুন ভাবে, নতুন আঙ্গিকে চিত্রকল্পের রঙে রাঙিয়ে নতুন ধারায় আধুনিকতার পরশে নির্মাণ করেছেন কবিদের কবি কবিতার নাবিক শব্দশ্রমিক সবার প্রিয় কবি আল মাহমুদ। সত্য যে, তিনি কবিতার সোনার চামচ মুখে নিয়ে এই বাংলায় জন্মেছেন। কবিতার সঙ্গেই গড়ে তুলেছেন একান্তে ঘর-সংসার। তিনি বলেছেন- ‘কবিতা আমার জীবন।’ অবশ্য কবি আল মাহমুদ শুধুমাত্র কবি হিসেবেই নয়, তিনি একাধারে একজন শক্তিমান গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক। সাহিত্যের অনেক শাখাতেই তার অবাধ বিচরণ। তার সৃষ্টির পরিধি সাহিত্যের বিশাল এলাকা জুড়ে। কিন্তু এত কিছু কিছু ছাড়িয়ে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন কবি এবং শুধুই কবি। একথা বলতে পারি যে, বাংলা কবিতা মানেই আল মাহমুদ, আর আল মাহমুদ মানেই বাংলা কবিতা। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসিমউদ্দীন এবং জীবনানন্দ দাশের পরে বাংলা কবিতায় হাতেগোনা যে ক’জন কবির নাম বারবার ঘুরে ফিরে আমাদের সামনে আসে তার মধ্যে আল মাহমুদ অন্যতম প্রধান কবি। কেননা, আল মাহমুদের নিপুণ হাতের জাদুর ছোঁয়ায় কলমের কালিতে বাংলা কবিতা যেন একটা একটা নক্ষত্রের মতো কাব্যাকাশে ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে। আল মাহমুদ একজন কবি হিসেবে নিজের চিন্তা-চেতনা, ভাব, রূপ-রস-গন্ধ, ছন্দ-তাল, বোধ, আবেগ, অনুভূতি ও ইচ্ছা শক্তিদ্বারা বাংলা কবিতাকে করে তুলেছে দীপ্তমান, বৈচিত্রময় ও সৃজনশীলতার এক সৌন্দর্যে অরণ্যভূমি। একজন কবি হয়ে তাই তিনি চরম সফলতার মানদ-ে জয়লাভ করেছেন। কাব্যজগতে যে নতুনের ভাবধারা ভাষা তিনি সৃষ্টি করেছেন, তার সমসাময়িক (৫০ দশকে) সময়ে অন্য অনেক কবি তা করে উঠতে পারেননি। কবি আল মাহমুদ তার কবিতায় সাধারণত আঞ্চলিক শব্দের সমাহার ঘটান এবং আধুনিক বাংলা ভাষার ভেতরে আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করে কবিতা নির্মাণ করেন। এ প্রসঙ্গে কবি বলেছেন- ‘আঞ্চলিক ভাষা মানেই হলো জীবন্ত ভাষা।’
বক্তাগণ বলেন, বাংলা কবিতার আকাশে কালজয়ী সৃষ্টি ‘সোনালী কাবিন’ কাব্যগ্রন্থটি কবি আল মাহমুদকে সত্যিকার অর্থে অন্যতম প্রতিভাবান প্রতিশ্রুতিশীল প্রজ্ঞাবান, সৃজনশীল এবং শ্রেষ্ঠরূপকার কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘সোনালী কাবিন’ কবিকে কাল থেকে কালান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে, অতীত থেকে বর্তমানে আর বর্তমান থেকে সুন্দর আগামীতেও বহমান খরস্রোতা নদীর মতো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। এই জন্য বলতে পারি যে, কবি আল মাহমুদের অপার সৃষ্টি ‘সোনালী কাবিন’ লেখার পরে তিনি যদি আর কোনো কবিতা নাও লিখতেন তবুও তিনি বাংলা কাব্যকাশে অমর, অক্ষয় এবং চিরভাস্মর হয়ে জাগ্রত থাকতেন ও থাকবেন।
বক্তাগণ বলেন, একজন কবি মূলত পৃথিবীর মধ্যে অন্যদের চেয়ে বড় প্রেমিক এবং বিশ্বাসী। আর সেই প্রেম ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে গভীর মনে কবি আল মাহমুদ সোনালী কাবিনে বলে উঠেছেন-
‘সোনার দিনার নেই দেন-মোহর চেয়ো না হরিণী/যদি নাও দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দুটি/
ভালোবাসা দাও যদি আমি দেবো আমার চুম্বন/ছলনা জানি না বলে আর কোনো ব্যবসা শিখিনি।’
একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে লিখিত প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন একাডেমীর স্থায়ী পরিষদ চেয়ারম্যান কবি, এডভোকেট সুলতান আহমেদ, স্থায়ী পরিষদ সদস্য গবেষক নূরুল আজিজ চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পিটিআইর প্রাক্তন সুপার রাজবিহারী চৌধুরী, কবি অধ্যাপক দিলওয়ার চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গল্পকার সোহেল ইকবাল, অর্থ সম্পাদক কবি মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন, নির্বাহী সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী আবুল কালাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হাসান আহমদ সোবহানী প্রমুখ।
আলোচনা শেষে সুলতান আহমেদ, মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন, সোহেল ইকবাল কবিতা পাঠ করেন।
বাবু রাজবিহারী চৌধুরী ও ছড়াকার নূরুল আলম হেলালী সংগীত পরিবেশন করেন।
উল্লেখ্য, আলোচনাক্রমে কবি দিলওয়ার চৌধুরী কথাসাহিত্যিক বলাই চাঁদ মুখোপধ্যায়ের (বনফুল) জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন।
রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস
কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৩৯৪তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় আগামী ৪ আগস্ট ২০১৭, ২০ শ্রাবণ ১৪২৪, শুক্রবার, বিকাল ৪টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম প্রয়াণ দিবস বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করা হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা, কবিতা পাঠ ও গান।

অনুষ্ঠানমালায় একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদি, সাহিত্যানুরাগী, চিন্তাশীল গবেষক, বুদ্ধিজীবীসহ সকলকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল অনুরোধ জানিয়েছেন।